নিউইয়র্কে কংগ্রেসম্যান মিকস কী বলেছেন, একটি ময়নাতদন্ত

নিউজ ডেস্কঃ র‌্যাব এবং সংস্থাটির সাবেক ও বর্তমান ৭ কর্মকর্তার ওপর বিদ্যমান মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে কংগ্রেসম্যান গ্রেগোরি ডব্লিউ মিকসের বক্তব্য নিয়ে দেশ- বিদেশে অন্তহীন কৌতূহল। ১০ই ডিসেম্বর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারির পর এই প্রথম একজন নীতিনির্ধারক কথা বলায় সঙ্গতকারণেই জনমনে নানা প্রশ্ন জেগেছে। যদিও নিষেধাজ্ঞায় এই কংগ্রেসম্যানের সরাসরি কোনো হাত নেই। ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকানদের ১০ সদস্যের একটি প্যানেল এই নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করে।

এর ভিত্তিতেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিষেধাজ্ঞার ফাইলে সই করেন। কংগ্রেসনাল কমিটির চেয়ার গ্রেগোরি ডব্লিউ মিকস সোমবার নিউ ইয়র্কের কুইন্স এলাকায় তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। এই অনুষ্ঠানে বেশির ভাগই ছিলেন বাংলাদেশি। কংগ্রেসম্যানের তরফে কোনো বিবৃতি আসেনি। ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কংগ্রেসম্যানের বক্তব্য প্রচার করে।

এটা অনেকটা অস্বাভাবিক। প্রভাবশালী এই কংগ্রেসম্যানের প্রায় ২৬ মিনিটের ভিডিও ক্লিপ প্রকাশিত হয়েছে। এতে তিনি কথা বলেন নানা বিষয়ে। এর মধ্যে নিষেধাজ্ঞা, ২০১৮-এর নির্বাচন, মানবাধিকার প্রসঙ্গ সহ নানা বিষয় স্থান পায়। তার বক্তব্য এসেছে খণ্ডিতভাবে। এ কারণে নানা আলোচনার খোরাক যুগিয়েছে। আমাদের কূটনৈতিক সংবাদদাতা মিজানুর রহমান খোঁজখবর নিয়েছেন বিশদভাবে। জানার চেষ্টা করেছেন, কংগ্রেসম্যান মিকস কোন প্রেক্ষাপটে কি বক্তব্য রেখেছেন।

কংগ্রেসম্যানের বক্তৃতার টেপ আমাদের হাতে। এতে দেখা যায়, কিছু জায়গায় তার বক্তব্য ভুলভাবে উত্থাপিত হয়েছে। বলা হয়েছে- “বাংলাদেশের ভেতরে এবং বাইরের একটি সুবিধাবাদী মহল দেশের আরও কিছু কর্মকর্তা এবং রাজনীতিবিদের ওপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য প্রবলভাবে লবিং চালিয়ে যাচ্ছে।” ওই অনুষ্ঠানের ১৮ মিনিটের ফেসবুক লাইভ এবং ৬ মিনিটের প্রশ্নোত্তর-পর্বে এটা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের শেয়ার করা দুই মিনিটের ভিডিও ক্লিপেও এটার উল্লেখ নেই।

এদিকে, মার্কিন কংগ্রেসম্যান গ্রেগোরি মিকস-এর বক্তব্য নিয়ে ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রচার এবং এর জেরে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোতে যে রিপোর্ট হয়েছে তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে। নিয়মিতভাবে ‘ফ্যাক্ট চেক’ করেন এমন একজন রীতিমতো এসবের পোস্টমর্টেম করেছেন। কদর উদ্দীন শিশির নামের ওই ফ্যাক্ট চেকার লিখেন- প্রায় সবগুলো সংবাদমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রস্থ বাংলাদেশের দূতাবাসের পাঠানো প্রেস রিলিজ থেকে প্রতিবেদন হয়েছে। কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম ‘সংবাদ প্রতিবেদন’-এর আদলে দূতাবাসের পাঠানো প্রেস রিলিজটি হুবহু অক্ষরে অক্ষরে দাঁড়ি-কমাসহ প্রকাশ করে দিয়েছে।

বিভিন্ন মিডিয়ার লিংক প্রচার করে শিশির যেটা বলার চেষ্টা করেন তা হলো- সংবাদমাধ্যম দূতাবাসের প্রেস রিলিজের সেই প্যারা দুটির অনুবাদ ভুলভাবে করেছে। অর্থাৎ, মিকসকে যে ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিলেন তার বক্তব্যকে মিকস-এর বক্তব্য হিসেবে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। কোনো কোনো সংবাদ মাধ্যম তাদের যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধির বরাতে দূতাবাসের প্রেস রিলিজের অনুবাদ করে ছেপেছে কিন্তু প্রতিবেদনের কোথাও প্রেস রিলিজের কথা উল্লেখ করেনি। ওই ফ্যাক্ট চেকার লিখেন- আবার দূতাবাসের প্রেস রিলিজে গ্রেগোরি মিকস-এর বক্তব্য কতোটা সঠিকভাবে উঠে এসেছে তা নিয়েও প্রশ্ন তোলার অবকাশ রয়েছে। গ্রেগোরির পুরো বক্তব্যের রেকর্ড একসঙ্গে পেলাম না।

তবে আলাদা দুটি ক্লিপে তার মূল বক্তব্যের প্রায় ১৮ মিনিট (বক্তব্যের শুরু এবং শেষের কথাগুলোতে মনে হয়েছে) এবং প্রশ্নোত্তর-পর্বের আরও ৬ মিনিটের রেকর্ড পাওয়া গেছে। সেই লিংকগুলো শেয়ার করে তিনি লিখেন-
মূল বক্তব্যে কংগ্রেসম্যান গ্রেগোরি মিকস বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং অন্যান্য বিষয়াবলীর পাশাপাশি বাংলাদেশের বিগত জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সমালোচনামূলক বিভিন্ন কথা বলেছেন এবং ২০২৩ সালের নির্বাচন কতোটা স্বচ্ছ হয় সেদিকে যুক্তরাষ্ট্র লক্ষ্য রাখবে বলেও উল্লেখ করেছেন; যেগুলো দূতাবাসের প্রেস রিলিজ এবং বাংলাদেশি মিডিয়ার রিপোর্টে আসেনি। শিশির লিখেন- স্পষ্টভাবেই কংগ্রেসম্যান বলেছেন স্যাংশন বা নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ওপর দেয়া হয়নি বরং র‌্যাবের (সংস্থা) উপর দেয়া হয়েছে। আর গত ১০ই ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত ঘোষণায় র‌্যাবের সাত বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার পাশাপাশি সংস্থা হিসেবেও র‌্যাবের নাম উল্লেখ ছিল এবং সেই ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্র ‘বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা’ দেয়ার কোনো কথাই বলেনি, বলেছে কিছু কর্মকর্তা আর সংস্থা হিসেবে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার কথা।

মার্কিন কংগ্রেসম্যানের বক্তব্যের বিস্তারিত
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপিও কংগ্রেসম্যানের দুই মিনিটের বক্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করেছেন। ফেসবুক পোস্টে প্রচারিত ওই ক্লিপের শিরোনামে প্রতিমন্ত্রী লিখেন- ‘যারা আনন্দে আত্মহারা হয়েছেন আশা করি তারা এই ব্যক্তিটিকে চিনেন। বিএনপি- জামায়াতের টাকা আবার পানিতে!’ প্রতিমন্ত্রীর শেয়ার করা ওই ক্লিপে কংগ্রেসম্যান যা বলেছেন তা হলো- ‘এটি বাংলাদেশের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নয়। এটা স্পষ্ট যে ওই অবরোধ বাংলাদেশের পুরো সরকারের ওপর নয়। এই নিষেধাজ্ঞার মানে এই নয় যে, আমরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করছি না। বরং আমরা বাংলাদেশকে সমর্থন করি। বাংলাদেশের অগ্রগতি যা ইতিমধ্যে সাধিত হয়েছে তাকে সমর্থন করি। কারণ আমরা বাংলাদেশকে আমাদের শক্তিশালী এবং গুরুত্বপূর্ণ মিত্র বা সহযোগী মনে করি। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে নিয়মিত সংলাপ এবং আলাপ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন নেই। এরপরেই মার্কিন কংগ্রেসম্যান র‌্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রসঙ্গ তুলেন। সেখানে তিনি নিজের মোবাইল ফোন সেটে রক্ষিত র‌্যাব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিস্তারিত পড়ে শোনান। সেখানে কংগ্রেসম্যান যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাগনেটস্কি আইনের কথা উল্লেখ করেন। ওই আইনের অধীনেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে বিদেশি যেকোনো সংস্থার বিরুদ্ধে স্যাংশন বা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। র‌্যাবের ৭ সদস্যের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পক্ষে-বিপক্ষে কথা শুনছেন জানিয়ে কংগ্রেসম্যান বলেন, এ জন্যই আমি বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি জানতে দেশটি সফর করতে চাই।’ ওদিকে ৬ মিনিটের প্রশ্নোত্তর-পর্বের ভিডিও ক্লিপে মার্কিন কংগ্রেসম্যানকে ফের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কথা বলতে শোনা যায়। তার ভাষ্যটি এমন ‘আমি নিশ্চিত করতে চাই যে, এটা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা নয়। আমরা বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণের সঙ্গে কাজ করছি এটা আবারও বলছি। তবে আমরা বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছি। ওই অনুষ্ঠান শেষে আরেকটি অনুষ্ঠানে যেতে হবে জানিয়ে কংগ্রেসম্যান বলেন, সেখানে হয়তো আমি উল্টো কথা শুনবো। তাই আমি আমার নিজের জাজমেন্টের জন্য বাংলাদেশ যেতে চাই।’ এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন। গ্রেগোরি মিকস বলেন, মানুষকে নিরাপদ রাখার কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পুলিশ সদস্যও তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে। কিন্তু এতে অন্যদের অধিকার লঙ্ঘিত হয়। আমরা এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখি। অনেক সময় সত্যতা পাই, তবে ব্যতিক্রমও ঘটে। এভাবেই আমি আমার নিজের জাজমেন্ট তৈরি করি। এ সময় তিনি মিশরীয় পুলিশের একটি উদাহরণ টানেন। কথা বলেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের ক্যাপিটাল হিলে হামলার ঘটনা নিয়েও। কংগ্রেসম্যান বলেন, আপনারা দেখেছেন ক্যাপিটাল হিলে কি ঘটেছিল। আমাদের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিশ্বাস করতেন ৬ই জানুয়ারি ক্যাপিটাল হিলে যারা হামলা করেছিল তারা ভালো মানুষ। আমরা ওই ঘটনার তদন্তে একটি কমিশন গঠন করেছি। তারা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। এর পরপরই ফের বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ফিরেন কংগ্রেসম্যান। বলেন, ‘আমাদের একজন নতুন রাষ্ট্রদূতের নিয়োগ হয়েছে, যিনি দ্রুতই বাংলাদেশে যাচ্ছেন। যে সমস্যাটা এখন তৈরি হয়েছে সেটা নিয়ে নিশ্চয়ই রাষ্ট্রদূত কাজ করবেন। তিনি তখন আলোচনা করে বলতে পারবেন সেখানকার (বাংলাদেশের) বাস্তব অবস্থা কি? ভবিষ্যতে কি করতে হবে? তিনি এ নিয়ে একটি প্রস্তাবনা উত্থাপনের সুযোগ পাবেন। তার প্রস্তাবনা পরবর্তী কী করা হবে সেটি একান্তই প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত। তবে আমি যেটা বলতে পারি তা হলো- রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে দায়িত্ব গ্রহণের পর আমি তার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাবো’ চলতি বছরে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আশাবাদ ব্যক্ত করে মার্কিন কংগ্রেসম্যান মিকস বলেন, “আমি মনে করি যে কোনো ইস্যুতে নানা জনের নানান মত আছে, সেটি কংগ্রেসকে জানানো হবে। আপনারা যারা এখানে আছেন তাদের মধ্যেও ভিন্নমত থাকতে পারে। বেশি মানুষের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাওয়া মাত্র দিয়ে দেয়া বিষয়টা এমন নয়। আমি উভয়পক্ষের কথা শুনতে চাই। আমি রাষ্ট্রদূতের কথা শুনবো, স্টেট ডিপার্টমেন্টের যারা মাঠে থেকে সরাসরি পরিস্থিতি দেখেছেন সেসব দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে কথা বলবো। আমরা তাদের মতামত নেবো এবং সেটি নিশ্চয়ই আরও পর্যালোচনা হবে।” মিকস বলেন, ‘আমরা এশিয়া-প্যাসিফিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাব-কমিটির চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলবো এবং এ বিষয়ে শুনানি করা যেতে পারে। সেখানে তথ্য-প্রমাণ জড়ো করা হবে। যারা সরাসরি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন তাদের কথা শুনবো। তারপর কংগ্রেসের সদস্য হিসেবে আমরা প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ দিতে পারবো কোন পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন আর কোনটির প্রয়েজনীয়তা নেই। এটাই হচ্ছে কাজের সঠিক পন্থা।’

এদিকে গ্রেগোরি মিকসের সূচনা বক্তব্যের ১৮ মিনিটের ভিডিও ক্লিপে শোনা যায়, তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলছেন। মার্কিন কংগ্রেসম্যান তার বক্তব্যে এটা স্পষ্ট করেন যে, বাংলাদেশে কী ঘটছে সেটি বন্ধু ও উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষেণের বাইরে নয়। সেখানে তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের প্রেক্ষিত বর্ণনা করেন। সেই আলোচনায় ধর্ম এবং সংস্কৃতির আদান-প্রদানের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। যুক্তরাষ্ট্রের সমৃদ্ধ বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির বিষয়টিও উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানের আয়োজককে ধন্যবাদ জানিয়ে কংগ্রেসম্যান বলেন- আমি খুবই গর্বিত এজন্য যে, আমি বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষদের প্রতিনিধিত্ব করি ওয়াশিংটনে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে কংগ্রেসম্যান বলেন, বাংলাদেশ এ পর্যন্ত যা অর্জন করেছে যুক্তরাষ্ট্র তার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। এজন্য যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকে। এ সময় তিনি বলেন, অনেকেই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তারা বলার চেষ্টা করেন বাংলাদেশের বিগত নির্বাচনটি আরও স্বচ্ছ হতে পারতো। বাংলাদেশের মিত্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমতাপূর্ণ করতে সবরকম সহায়তা দিয়ে থাকে। এটা এজন্য যে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেন বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছা সত্যিকারের প্রতিফলন ঘটে। নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সফরের আগ্রহ পুনর্ব্যক্ত করে মার্কিন কংগ্রেসম্যান বলেন- আমি বাংলাদেশ সফরের পরিকল্পনা করছি। যারা ক্ষমতায় আছেন এবং যারা ক্ষমতার বাইরে তাদের সবার সঙ্গে আমি কথা বলতে চাই। আমি বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে সাধারণ মানুষ কি বলছে- সেটি শুনতে চাই। বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং গণতন্ত্রের বন্ধু আখ্যা দিয়ে কংগ্রেসম্যান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। আশা করি ২০২৩ সালের ওই নির্বাচনে মানুষের ইচ্ছার প্রকৃত প্রতিফলন ঘটবে। দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি প্রসঙ্গে এখানেও তিনি কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্র যে ব্যবস্থা নিয়েছে তা উভয়ের মঙ্গলের জন্য নিয়েছে দাবি করে কংগ্রেসম্যান বলেন, মানবাধিকার সংগঠনগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেসব অভিযোগ সম্মিলিতভাবে তুলেছে সেটি যুক্তরাষ্ট্র সরকার খতিয়ে দেখছে। তিনি বলেন, একজনের কাছে একরকম তথ্য আছে, অন্যজনের কাছে ভিন্ন তথ্য থাকতে পারে। আমরা দু’টোই চাই। আমাদেরকে সঠিক তথ্য দিন। আমরা প্রকৃত অবস্থা জানতে চাই।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে গত ১০ই ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র ‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশের র‌্যাব’র সাবেক মহাপরিচালক ও বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদসহ বাহিনীর ৭ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিক্রিয়ায় ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলারকে তলব করে সরকারের অবস্থান জানানো হয়। এ নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্থনি জে ব্লিনকেনকে চিঠিও দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন।

তহবিল সংগ্রহের আয়োজনটি কেমন ছিল:
ডেমোক্রেটিক পার্টির নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠান ছিল এটি। অনুষ্ঠানস্থল নিউ ইয়র্কের কুইন্স এলাকার একটি রেস্তোরাঁ। কূটনৈতিক এবং স্থানীয় সূত্রের খবর- অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কমিউনিটি লিডার মোরশেদ আলম। এটি অনুষ্ঠিত হয় একটি বাংলাদেশি রেস্তোরাঁয়। কংগ্রেসম্যান গ্রেগোরি মিকসের নির্বাচনী আসনে অবস্থিত জ্যামাইকা এলাকায় বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশির বসবাস। মূলত তাদেরকে সামনে রেখেই গ্রেগোরি মিকসকে এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ‘বাংলাদেশিজ ফর গ্রেগোরি মিকস’- ব্যানারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে কমিউনিটি অর্গানাইজার সাখাওয়াত আলী, নিউ ইয়র্কে ডেমোক্রেটিক পার্টির তৃণমূল নেতা ড. দীলিপ নাথ, আমেরিকা-বাংলাদেশ অ্যালায়েন্সের প্রেসিডেন্ট এমএ সালামসহ প্রবাসী বাংলাদেশিদের বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য দেন- প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ।

ডেমোক্রেট নেতা ও আইনজীবী মিকস যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে নিউ ইয়র্কের ভোটারদের প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন ১৯৯৮ সাল থেকে। ২০২১ সাল থেকে তিনি পররাষ্ট্র বিষয়ক হাউজ কমিটির চেয়ারের দায়িত্বে আছেন। স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাশেদ চৌধুরীর যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস বিষয়ে কথা তোলেন স্থানীয় নেতারা। এতে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্নও রাখা হয়েছিল এই কংগ্রেস সদস্যের সামনে। জবাবে তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *