টিকা পেতে শিক্ষার্থীদের পদে পদে ভোগান্তি 

নিউজ ডেস্কঃ ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা দেওয়া নিয়ে শুরু থেকেই সমস্যা হচ্ছে। টিকা পেতে শিক্ষার্থীদের পদে পদে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আইসিটি—এই তিন বিভাগের সমন্বয়হীনতার কারণেই এটি হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এখন চিকিৎসক ও নার্সের সংকট এবং অলিগলিতে থাকা স্কুলগুলো সরকারি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় সমস্যার পাল্লা আরো ভারী হয়েছে।

১৫ জানুয়ারির মধ্যে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শেষ করার সিদ্ধান্ত ছিল সরকারের। এ জন্য কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর। কিন্তু টিকা ও কেন্দ্র সংকটের কারণে জানুয়ারির শেষ পর্যায়ে এসে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। কোথাও কোথাও এখনো প্রথম ডোজের টিকা কার্যক্রম চলছে। টিকা গ্রহণ ছাড়া কোনো শিক্ষার্থী শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে না—এমন নির্দেশনাও রয়েছে শিক্ষা বিভাগের।

টিকা দেওয়ার জন্য একটি স্কুল কেন্দ্রে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়। তাদের সঙ্গে থাকেন অভিভাবক। ফলে কয়েক হাজার মানুষের উপস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে টিকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া কেন্দ্রের সংখ্যা কম থাকায় অনেক দূর থেকে শিক্ষার্থীদের টিকাকেন্দ্রে যেতে হয়। এতে তাদের ভোগান্তিও বেড়ে গেছে।

ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, ঢাকা মহানগরীর ৪০টি স্কুলকে টিকাকেন্দ্র হিসেবে নির্ধারণ করা হলেও চিকিৎসক ও নার্সের সংকটের কারণে মাত্র ১০টি কেন্দ্র চালু রাখা যাচ্ছে। প্রতিটি কেন্দ্রে ১৬ থেকে ২০ জন চিকিৎসক ও নার্স প্রয়োজন। ৪০টি কেন্দ্র প্রতিদিন চালু রাখতে হলে যেসংখ্যক চিকিৎসক ও নার্স দরকার, তা ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন অফিস সরবরাহ করতে পারছে না।

আবার যে ১০টি কেন্দ্র চালু থাকছে, সেখানে টিকাদানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সিং ইনস্টিটিউটের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা যুক্ত হয়েছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুই সপ্তাহ বন্ধ থাকার কারণে এসব শিক্ষার্থী বাড়ি চলে যাওয়ায় গত এক সপ্তাহ ধরে পাঁচ-ছয়টি কেন্দ্র চালু রাখা যাচ্ছে। এ কারণে টিকাদানে গতি কমে যায়। আগামী সপ্তাহে আবার ১০টি কেন্দ্র চালু করা যাবে বলে জানিয়েছে ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিস।

শনিবার মিরপুরের মনিপুর উচ্চবিদ্যালয়, খিলগাঁওয়ের ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল, লালবাগ মডেল স্কুল, কাফরুলের স্কলাস্টিকা স্কুল এবং ধানমন্ডির স্কলার্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ—এই পাঁচটি  কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হয়। এর মধ্যে শুধু মনিপুর স্কুলেই ৬৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৪ হাজার ৩৫৩ জন শিক্ষার্থীকে টিকাদানের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে এত বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে টিকা দেওয়া যাচ্ছে না।

ঢাকা মহানগরীর শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম মনিটরিং করছে ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিস। এছাড়া মহানগরীর ১৬টি থানা শিক্ষা অফিস থেকে সব ধরনের তথ্য সংগ্রহ করছে। কিন্ডারগার্টেন ও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের তথ্য জেলা শিক্ষা অফিসে না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগে পড়ছে বেশি। এসব স্কুল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করলেও সহযোগিতা পাচ্ছে না।

ধানমন্ডির উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবদুল কাহার বলেন, এই থানাধীন শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় ডোজ চলছে। যেসব স্কুল বাদ পড়েছে, তাদের ক্ষেত্রে কী করণীয়—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলা মিডিয়াম নিয়ে কাজ করি। ঢাকা শহরের অলিগলিতে অনেক স্কুল রয়েছে। সবগুলো আমাদের পক্ষে খুঁজে বের করা সম্ভব নয়। তবে যদি কেউ বাদ পড়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা টিকাদানের ব্যবস্থা করে থাকি।’

ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা নুরই আলম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এই টিকা ২৮ দিনের মধ্যে দেওয়া যাবে না। ২৮ দিনের পর দিতে হয়। আমরা বিষয়টি নজরে রাখছি। প্রথম ডোজ টিকা দেওয়ার পর তা শেষ হয়ে যায়। এ কারণে একটু সমস্যা হয়েছিল। তবে এখন টিকার সংকট নেই।’

এই কর্মকর্তা বলেন, স্কুল খোলার পর টিকাকেন্দ্রের সংকট দেখা দিয়েছিল। কারণ অনেক স্কুল শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করায় কেন্দ্র চলমান রাখতে রাজি ছিল না। তবে সংকট ক্রমশ কমে যাচ্ছে।

গত নভেম্বর থেকে দেশের ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয়। প্রথমে সিদ্ধান্ত হয়েছিল রাজধানীর ১২টি স্কুলে কেন্দ্র করা হবে। পরে আটটি কেন্দ্রে শিশুদের টিকাদান শুরু হয়। প্রথম দিন ঢাকা ও মানিকগঞ্জে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *