শনিবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম মিলন।
১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের রাঙ্গুুনিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। তার বাবা আবুল কাশেম ছিলেন পল্লী চিকিৎসক।
মিলন বলেন, ‘সকাল ৯টা ২০ মিনিটে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের প্রেস সচিব খন্দকার দেলোয়ার জালালী জানান,শনিবার বাদ এশা গুলশান আজাদ মসজিদে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন তিনি।এর আগে দুপুর ১ টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কার্যালয় কাকরাইল চত্বরে রাখা হবে তার মরদেহ।
এর আগে সেপ্টেম্বর মাসে তিনি করোনায় আক্রান্ত হলে ধানমন্ডির ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তাকে শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে নেওয়া হয়।
সত্তরের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতাপশালী ছাত্রনেতা ছিলেন জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। পরে তিনি ডাকসুর জিএস নির্বাচিত হন। এরশাদ সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা ছাড়াও পরবর্তী সময়ে এই দুই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং পর্যটনমন্ত্রীও ছিলেন।
শোকবার্তায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ‘মানুষের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু সবসময় ছিলেন আপোষহীন। তিনি অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন আজীবন। জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ছিলেন গণমানুষের কণ্ঠস্বর। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে উজ্জ্বল ধ্রুবতারা।’
জাতীয় পার্টিতে বাবলুর অবদানের কথাও স্মরণ করেন জি এম কাদের।
দেলোয়ার জালালী জানান, জাতীয় পার্টি মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর মৃত্যুতে তিন দিনের দলীয় শোক ঘোষণা করেছে জাতীয় পার্টি। শনি থেকে সোমবার পর্যন্ত জাতীয় পার্টির প্রতিটি দলীয় কার্যালয়ে দলীয় ও কালো পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।
রোববার বিকেল ৩টায় জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কাকরাইল চত্বরে জাতীয় পার্টি মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর মৃত্যুতে শোক সভা অনুষ্ঠিত হবে। শোক সভায় জি এম কাদেরসহ জাতীয় পার্টি শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
পার্টি ঘোষিত ৩ দিনের শোক দিবসের মধ্যে বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কার্যালয়ে শোকসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে।
জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জীবিত থাকাকালে ২০১৪ সালে দলের মহাসচিবের দায়িত্ব দিয়েছিলেন বাবলুকে। সে দায়িত্বে তিনি ছিলেন ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। পরে ২০২০ সালের জুলাই মাসে মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁকে নিয়ে দলে অস্থিরতা দেখা দিলে তাকে হটিয়ে বাবলুকে আবার মহাসচিবের দায়িত্বে নিয়ে আসেন দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
১৯৮৮ সালে চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ২০১৪ সালে (চট্টগ্রাম-৯) আসন থেকে দশম জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন বাবলু। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এরশাদের নির্দেশে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন।
জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর প্রথম স্ত্রী ফরিদা সরকার। তিনি ২০০৫ সালে মারা যান। পরে ২০১৭ সালের ২১ এপ্রিল তিনি এরশাদের ভাগ্নি মেহেজেবুন্নেসা টুম্পাকে বিয়ে করেন।
রাজনীতির পাশাপাশি বেসরকারি ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।